বৃহস্পতিবার, ০৯ মে ২০২৪, ২৬ বৈশাখ, ১৪৩১
মোঃ আসাদুজ্জামান, ঠাকুরগাঁও।।
মাছ-মুরগির প্রিয় খাবার পোকামাকড়ের লার্ভা, যা এখন খামারে উৎপাদিত হচ্ছে বিভিন্ন দেশে। সম্প্রতি দেশে মুরগির খাবারের দাম বৃদ্ধি নিয়ে খামারিরা যখন উদ্বিগ্ন, সেই সময় এই বিকল্প পোলট্রি ফিডের সম্ভাবনার কথা শোনালেন ঠাকুরগাঁওয়ের মোমিনুল ইসলাম।
ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার বালিয়া ইউনিয়নের বগুলাডাঙ্গী গ্রামে মোমিন গড়ে তুলেছেন কালো মাছির খামার। সেখানে উৎপাদিত মাছির লার্ভা দিয়ে তিনি চালাচ্ছেন নিজের মুরগির খামার। ইতোমধ্যেই তিনি লার্ভা বিক্রিও শুরু করেছেন।
ব্ল্যাক সোলজার মাছির খামারী মোমিনুল ইসলাম বলেন, ২০১৪ সালে বাড়ির পাশেই একটি ব্রয়লার মুরগির খামার দেন তিনি। কিন্তু মুরগির খাবার ও অন্যান্য যাবতীয় সামগ্রীর দাম বেড়ে বেকায়দায় পড়েন তিনি। তবু চালিয়ে যান। ২০২০ সালে খাবারের দাম অতিরিক্ত বেড়ে এবং ওষুধসহ অন্য সামগ্রীর দাম বেড়ে যাওয়ায় আমি আর খামার চালাতে পারিনি। বন্ধ করে দিতে হয়। জীবিকার জন্য তখন বিকল্প চিন্তা করেন তিনি।
মোমিন বলেন, চলতি বছর অগাস্টের শেষের দিকে গাইবান্ধায় জুলফিকার আল মামুন সুমন নামে এক ব্যক্তির সঙ্গে আমার দেখা হয়। সুমন সেখানে কৃত্রিম উপায়ে এই মাছির খামার গড়ে তুলেছিলেন। সেই মাছি থেকে সংগ্রহ করা লার্ভা মুরগি ও মাছের খামারে ব্যবহার করছিলেন সুমন। সুমনের কাছে প্রশিক্ষণ নিয়ে এবং দুই কেজি মাছি কিনে নিয়ে মোমিন নতুন আশায় শুরু করেন তার স্বপ্নের খামার।
বাড়ির পাশে মুরগির পরিত্যক্ত খামারে মাছির খামার শুরু করি। শুরুতে পরিবার ও স্থানীয়রা নানা রকম কটূক্তি করেছে। কিন্তু আমি সফলভাবে লার্ভা ও মা-মাছি উৎপাদনের পর আবার মুরগির খামার শুরু করতে পেরেছি। পরীক্ষামূলকভাবে ২৫০টি ব্রয়লার মুরগির চাষ করছি নিজের খামারে উৎপাদিত লার্ভা দিয়ে। বাজার থেকে কেনা পোলট্রি ফিডের পরিবর্তে মুরগিদের খাওয়াচ্ছি মাছির লার্ভা। তাছাড়া মাছের খামারেও এই লার্ভা ব্যবহার করা হচ্ছে। গত দেড় মাসে তার খামারের মুরগিগুলো লার্ভা খেয়ে ভালভাবে বেড়ে উঠছে বলে তিনি দাবি করেন।
মোমিনুল বলেন, এই মাছি ১৫ দিন বয়সে ডিম দেয়। ডিম দেওয়ার ৪৫ মিনিট পর মাছিটি মারা যায়। মাছির খাদ্য হিসেবে উচ্ছিষ্ট ও পচা খাবার ব্যবহৃত হয়। কৃত্রিম উপায়ে ডিম থেকে লার্ভা জন্ম নেওয়ার পর ২১ দিনে তা মাছ, মুরগি ও পাখির খাবার হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এই খামার সম্পূর্ণ পরিবেশবান্ধব। খুব অল্প খরচে যে কেউ এই খামার গড়ে তুলতে পারেন।
মোমিন বলেন, এই খামার খুব দ্রুতই সারাদেশে ছড়িয়ে পড়বে বলে আশা করছি।
ওই এলাকার বাসিন্দা নজরুল ইসলাম বলেন, মোমিন যখন প্রথম এই মাছির লার্ভা বাড়িতে নিয়ে আসে তখন এলাকার মানুষজন ও পরিবারের লোকজন তাকে নানাভাবে বকা দিয়েছিল। কিন্তু এখন সবাই ভাবছে মোমিন সফল হতে যাচ্ছেন।”
মাছির খামার দেখতে আসা সাইফুল হক নামে এক ব্যক্তি বলেন, লোকমুখে শুনে মাছির খামার দেখতে আসলাম। এই লার্ভা মাছ, মুরগি, হাঁসকে খাওয়ানো যায়। আমিও এমন একটি খামার গড়ে তুলতে চাই।
খামারের মুরগির খাবার হিসেবে মাছি চাষের এই উদ্যোগকে ইতিবাচক মনে করছেছেন কৃষি ও কীটতত্ত্ববিদরা।
ঠাকুরগাঁও জেলা প্রাণীসম্পদ কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ বলেন, পোল্ট্রি ফিডের বিকল্প খাদ্য হিসেবে মোমিনুল যে মাছির খামার গড়ে তুলেছেন, তাতে তিনি লাভবান হচ্ছেন। মোমিনের এই উদ্যোগকে আমি সাধুবাদ জানাই। এমন খামার প্রতিটি উপজেলায় ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য মোমিনুল ইসলামকে সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে।